সাংখ্য-যোগ শ্লোক ১
সঞ্জয় উবাচ
তং তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম
বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ ।। ১ ।।
সঞ্জয়ঃ উবাচ-- সঞ্জয় বললেন; তম্-- অর্জুনকে; তথা-- এভাবে; কৃপয়া-- কৃপায়; আবিষ্টম্-- আবিষ্ট হয়ে; অশ্রুপূর্ণ-- অশ্রুসিক্ত; আকুল-- ব্যাকুল; ঈক্ষণম্-- চক্ষু; বিষীদন্তম্-- অনুশোচনা করে; ইদম্-- এই; বাক্যম্-- কথাগুলি; উবাচ-- বললেন; মধুসূদনঃ-- মধুহস্ত।
অনুবাদনঃ-
সঞ্জয় বললেন--অর্জুনকে এভাবে অনুতপ্ত, ব্যাকুল ও অশ্রুসিক্ত দেখে, কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুওসূদন বা শ্রীকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন।
তাৎপর্যঃ-
জাগতিক করুণা, শোক ও চোখের জল হচ্ছে প্রকৃত সত্তার অজ্ঞানতার বহিঃপ্রকাশ শাশ্বত আত্বার জন্য করুণা অনুভব হচ্ছে আত্ব-উপলব্ধি। এই শ্লোকে 'মধুসূদন' শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণ মধু নামক দৈত্যকে হত্যা করেছিলেন এবং এখানে অর্জুন চাইছেন, অজ্ঞতারুপ যে দৈত্য তাকে তাঁর কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত রেখেছে তাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হত্যা করুন। মানুষকে কিভাবে করুণার প্রদর্শন করতে হয়, তা কেউ জানে না। যে মানুষ ডুবে যাচ্ছে, তাঁর পরনের কাপড়ের করুণা প্রদর্শন করাটাই নিতান্তই অর্থহীন। তেমনই, যে মানুষ ভবসুমদ্রে পতিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, তাঁর বাইরের আবরণ জড় দেহটিকে উদ্ধার করলে তাকে উদ্ধার করা হয় না। এই কথা যে জানে না এবং যে জড় দেহটির জন্য শোক করে , তাকে বলা হয় শূদ্র, অর্থাৎ যে অনর্থক শোক করে। অর্জুন ছিলেন ক্ষত্রিয় তাই তাঁর কাছ থেকে এই ধরনের আচারণ আশা করা যায় না। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের শোকসন্তপ্ত হ্রদয়কে শান্ত কররতে পারেন, তাই তিনি অর্জুনকে ভগবদ্গীতা শোনালেন। গীতার এই অধ্যায়ে জড় দেহ ও চেতন আত্বার বিশদভাবে আলোচনার মাধ্যমে পরম নিয়ন্তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন-- আমাদের স্বরুপ কি, আমাদের প্রকৃত পরিচয় কি। পারমার্থিক তত্বের উপলব্ধি এবং কর্মফলের নিরাসক্তি ছাড়া এই অনুভূতি হয় না ।
শ্লোক সংখ্যা আরো কোথায়
ReplyDelete